কলকাতায় জয়তু চাকমা’র একক প্রদর্শনী
কলকাতায় জয়তু চাকমা’র একক প্রদর্শনী
বাংলাদর্পণ ডেস্ক:
বর্তমানে পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আচার, আচরণ, নির্যাতন এবং অবহেলার মানসিক অবস্থা নীল ক্যানভাসের ১৯টি চিত্রকর্মে তুলে ধরেছেন তরুণ শিল্পী জয়তু চাকমা।
প্রতীকী ভাষায় মূলত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলীয় ভাগ ও সংঘর্ষের চিত্র স্থান পেয়েছে প্রতিটি চিত্রকর্মে।
কলকাতার আইসিসিআর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারিতে গত ১৭-১৯ জুলাই ‘‘এ্যাল মোনো হধা’ শিরোনামে জয়তু’র একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
সমস্ত শরীর আগুনে পুড়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সবুজ পাহাড়ের মানুষগুলো। প্রতিটি চিত্রকর্মে হাজার হাজার পরিবারের বাস্তুহারা হয়ে পরার কষ্টের প্রতিবাদ শরীরের ব্যান্ডেজ। কিন্তু স্পষ্ট করে কারও চেহারা মনে রাখছি না।
শুধু জাতি সম্প্রদায় নিয়ে আমরা কথা বলছি। সেই ভাবনা প্রতিটি চিত্রকর্মে প্রতীকীভাবে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী সম্প্রদায়ের ঝুড়ি, পোষাকের বদলে যুক্ত হয়েছে বিষাদময় নীল রঙের ব্যান্ডেজ। নিরপরাধ মানুষগুলোকে অসহায়ভাবে রাষ্ট্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে। চাকমা সম্প্রদায়ের শরীরে বয়ে চলা ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টার ইঙ্গিত রয়েছে জয়তুর ব্যান্ডেজ মোড়া চিত্রকর্মে। কখনো একা বা দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদী চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তার ক্যানভাস জুড়ে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মো.তরিকত ইসলাম প্রদর্শনী দেখে বলেন ‘‘পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষের পারিপার্শ্বিক যে অবস্থা, ক্ষত ও ক্ষরণ সে জায়গাগুলো তার চিত্রকর্মে নিপুণভাবে উঠে এসেছে। বিভিন্ন বৈচিত্রতা নিয়েই বাংলাদেশ, সেখানে পাহাড়ের যে অবস্থান, সেখানকার জীবন যাত্রার সাথে জীবন আচরণ তৈরি হয়। মূলত মনুষ্যসৃষ্টির যে ক্রাইসিস, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির চিত্র ও সবুজ পাহাড়ে অশান্তি তার চিত্রকর্মে স্থান পেয়েছে।’’
পার্বত্য রাংঙ্গামাটির সদর উপজেলা বন্দুকভাঙ্গা গ্রামে জন্ম তরুণ শিল্পী জয়তু চাকমার। পিতা প্রভাত কিশোর চাকমা ও মাতা বুদ্ধ মালা চাকমা।
ছোট থেকেই স্কুলের খাতায় ছবি আঁকা দিয়ে শুরু। বড় ভাই সুদীর্ঘ চাকমার অনুপ্রেরণায় রাংঙ্গামাটি সদরে চারুকলা একাডেমী স্কুলে রতিকান্ত তঞ্চংগার কাছে একাডেমিকভাবে ছবি আঁকা শুরু। ২০০৫ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম হয়ে জাতীয় পর্যায়েও অংশগ্রহণ করেন। এসএসসি’র পর রাঙ্গামাটি কলেজে ভর্তি হন।
বড় ভাই সুদীর্ঘ চাকমার অনুপ্রেরণায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ২০০৮-০৯ সেশনে ভর্তি হন। চিত্রকর্ম নিয়ে থাকা জয়তু বিএফএতে (অনার্স) সব বিভাগ মিলে (প্রিন্ট মেকিং,ভাস্কর্য ও চিত্রকলা) প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এরপর ২০১৬ সালে ভারত সরকারের আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ চিত্রকলা বিভাগে ভর্তি হন।
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন স্মৃতি পুরস্কার ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় নবীন ও এশিয়ান চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন জয়তু। বিরালা বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী (২০১৫) কলকাতা, রবীন্দ্র ভারতী বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী (২০১৭), বার্জার তরুণ আর্ট প্রতিযোগিতা ২০১৭, ইয়ং আর্ট প্রদর্শনী ঢাকা শিল্পকলাসহ আলিয়ঁস ফ্রঁসেস আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার পান। এছাড়াও দেশী বিদেশী প্রায় ৮ টি আর্ট কর্মশালাতে অংশগ্রহণকারী ও আয়োজক হিসেবে কাজ করেন। তবে কলকাতায় এটি তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন চিত্রকর্মের মাধ্যমে শিল্পী হিসাবে প্রতিবাদের ভাষা অক্ষুন্ন রাখতে চান। পাহাড়ে বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রীস্টান সবার মাঝে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করার জন্য চিত্রকর্মের ভাষায় প্রতিবাদ ও নিজের এলাকায় একটি আর্ট স্টুডিও করার স্বপ্ন আছে জয়তুর। পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষক পেলে বাংলাদেশেও সবুজ পাহাড়ের সম্প্রীতির জন্য একক চিত্র প্রদর্শনী করতে চান জয়তু চাকমা।
Comments
Post a Comment