ভিক্ষুত্ব অবস্থা হওয়া অপরাধগুলি কি গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়? ভদন্ত আশিন ধর্মপাল ভিক্ষু,
ভিক্ষুত্ব অবস্থা হওয়া অপরাধগুলি কি গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়?
লিখেছেনঃ- ভদন্ত আশিন ধর্মপাল ভিক্ষু
আজকাল অনেক উপাসক সপ্তাহের জন্যে কিংবা মাসের জন্যে প্রবজ্জা গ্রহণ করে থাকেন৷ এবং নানান কারণে জ্ঞাত অবস্থায় বা অজ্ঞাতাবস্থায় গুরুকা অাপত্তি ও লহুকাপত্তি এই দুই ধরণের আপত্তিগুলি হয়ে থাকে৷
কতিপয় আছেন, গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলে সেই আপত্তিগুলি আপনা থেকেই পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে এই ধারণায় চলে যান৷
প্রকৃতপক্ষে তা নয়, আপত্তিসমূহ গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলেও আপত্তি আপত্তিই থেকে যায়৷
পরেরবার বা কয়েক বছর কিংবা দল বিশ বছর পর ভিক্ষু হলেও সেই পূর্বের আপত্তি অবশ্যই চলে আসবে৷
যদি পূর্বে ভিক্ষুত্বাবস্থায় ঐ আপত্তিকে(আপত্তির প্রকারভেদে) দেশনার দ্ধারা পরিশুদ্ধ করা না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার অবশ্যই করা উচিত৷
পরিশুদ্ধ না হওয়া অবধি সেই আপত্তি(অপরাধসমূহ) ছাই চাপা অগ্নির ন্যায় টিমটিম করে জ্বলতে থাকে ছাইয়ের মধ্যে৷
তাই উপাধ্যায়গণদের উচিত তাদের শিষ্যদের গৃহী অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে ভিক্ষুত্বাবস্থায় বিনয় শিক্ষাপদানুসারে লঙ্ঘন করা আপত্তিসমূহকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করানো৷
নয়তো ইহজন্মে তিনি কদাপি মার্গলাভে সক্ষম হবেন না৷ মার্গের পথরোধক হবে সেই অপরাধগুলি৷ এবং দেহান্তরের পশ্চাতে অপায়ের কারণও হতে পারে৷
বজীরা বুদ্ধি টীকা ৪৪৪ পৃঃ৷
"কোন ভিক্ষু যদি সর্বনিন্ম দুব্ভাসিক আপত্তিও হয়৷ তাহলে ঐ প্রাপ্ত আপত্তিকে দেশনা করা ছাড়া পরিশুদ্ধ হওয়ার অন্য কোন মার্গ অবশিষ্ট নেই৷"
(উপসম্পন্নো ভিক্খু অন্তমসো দুব্ভাসিতম্পি আপজ্জত্বা অপরভাগে বিব্ভমিত্বা অাগতো উপম্পজ্জতি, তং অাপত্তিং দেসেত্বাব সুজ্ঝতি, ন অঞ্ঞতা৷)
গুরুকাপত্তি— বড় আপত্তি৷ যেমন সংঘাদিসেস৷
এই আপত্তি সর্বমোট ১৩টি৷ তার মধ্যে
— শুক্র মোচন(Masterbation) আপত্তিই বেশি হয়ে থাকে৷ শুধুমাত্র হাতে করলেই যে শুক্রমোচন হয় তা নয়৷ যদি সেই চেতনায় দুই পায়ের মাঝে চেপে রাখে এবং সামান্য পরিমানও যদি শুক্র নির্গত হয় তাহলেও এই আপত্তি হয়ে যায়৷
— গৃহী অবস্থায় থাকাকালীন প্রেমিকার সাথে যদি রাত্রি বা দিবাকালীন একা(অন্য কোন ভিক্ষুর অনুপস্থিতে) পাঁচ-ছয় শব্দের অধিক কথা বলে তাহলেও আপত্তি৷ তাই ভিক্ষু হলে অন্তত যে কয়দিন অবস্থান করবেন ততদিন নারীদের সাথে কথোপকথন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন৷ যথাসম্ভব আপত্তি হওয়ার কারণগুলি হতে বিরত থাকুন৷ না জানলে আচার্য বা উপাধ্যায়ের নিকট হতে জেনে নিন৷
প্রবজ্জিত হয়েছেন পূণ্যের জন্যে৷ কিন্তু পূণ্য না নিয়ে, নিয়ে যাবেন বস্তাভর্তি পাপ৷ অার শাসনকে করে যাবেন দূষিত৷ প্রত্যেক উপাধ্যায়ের উচিত নতুন উপাসম্পাদা হওয়া নব ভিক্ষুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিনয়ের শিক্ষাপদগুলি বুঝিয়ে বলা৷
অনেক ভিক্ষু মনে করেন নতুন উপসম্পাদা প্রাপ্ত নব ভিক্ষুকে বিনয় সম্পর্কে বলা অনুচিত৷ হয়তো শাসনের প্রতি অনীহা কিংবা ভয়ের সঞ্চার হবে৷ তাই তারা বলেন না৷ কিন্তু বিনয় না জানার কারণে কেবল ঐ নব ভিক্ষুরই যে আপত্তি হয় তা নয়, শাসনেরও যে অনেক ক্ষতি করছে তা অনুধাবন করতে পারেন না অনেকে৷ শাসনে থাকা না থাকা ব্যক্তিসত্বার আপন আপন মনের ব্যাপার৷ তাই বলে বিনয় বলা যাবে না এটা কেমন যুক্তি? আর যে উপসম্পাদা নিচ্ছে তারও মঙ্গল হবে যদি সে বিনয় জানে এবং যথাসাধ্য বিনয় পালনের চেষ্টা করবে৷
যদি শ্রমণ হয়, তাহলে শ্রামণ্য ধর্মসমূহ শিক্ষা দেয়া উচিত৷ এসেছে পূণ্যের আশায়, মৃত ব্যক্তিকে নিজের পূণ্যাংশ দিবে বলে, থাকছে মাত্র সপ্তাহ৷ তার মধ্যে যদি নিজের করণীয় ধর্মগুলিই না জানে তাহলে তার আর কি লাভ হলো! অবশেষে বস্তাভর্তি পাপ নিয়ে ঘরে ফিরছে সবাই৷
কিন্তু কতিপয় ভিক্ষুতো নিজেই পালন করে না, শিষ্যদের কি বা শিক্ষা দিবে৷ আফসোস.......৷ তবে নিজে পালন করা বা না করা ব্যক্তিসত্বার মনের ব্যাপার৷ কিন্তু শিষ্যকে অবশ্যই সঠিক শিক্ষা দেয়া উচিত৷
উপাধ্যায় ততক্ষণ পর্যন্ত শিষ্যের কাছে পূজনীয় যতক্ষণ পর্যন্ত শিষ্যের মঙ্গলার্থে সঠিক শিক্ষা প্রদান করেন৷ কিন্তু শিষ্য জেনে যাবে, জেনে গেলে তার সম্মানহানী হবে এই ভয়ে না বলা উপাধ্যায়ই আপন শিষ্যের কাছে পূজা অর্চনার অযোগ্য হয়ে যান৷
সুতরা নিজে যেমনই হোক, শিষ্যকে অবশ্যই সঠিক শিক্ষা দেয়া উচিত৷ আর এটাই একজন কল্যানকামী উপাধ্যায়ের গুণ৷ শীলবান হতে না পারেন সমস্যা নেই, কিন্তু অবশ্যই কল্যানকামী উপাধ্যায় হতে পারেন, যদি চেষ্টা করেন৷
অবশ্যই প্রবজ্জাপ্রার্থীগণয় পড়বেন)
লিখেছেনঃ- ভদন্ত আশিন ধর্মপাল ভিক্ষু
মায়ানমার (বার্মা)থেকে
|
আজকাল অনেক উপাসক সপ্তাহের জন্যে কিংবা মাসের জন্যে প্রবজ্জা গ্রহণ করে থাকেন৷ এবং নানান কারণে জ্ঞাত অবস্থায় বা অজ্ঞাতাবস্থায় গুরুকা অাপত্তি ও লহুকাপত্তি এই দুই ধরণের আপত্তিগুলি হয়ে থাকে৷
কতিপয় আছেন, গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলে সেই আপত্তিগুলি আপনা থেকেই পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে এই ধারণায় চলে যান৷
প্রকৃতপক্ষে তা নয়, আপত্তিসমূহ গৃহী অবস্থায় ফিরে গেলেও আপত্তি আপত্তিই থেকে যায়৷
পরেরবার বা কয়েক বছর কিংবা দল বিশ বছর পর ভিক্ষু হলেও সেই পূর্বের আপত্তি অবশ্যই চলে আসবে৷
যদি পূর্বে ভিক্ষুত্বাবস্থায় ঐ আপত্তিকে(আপত্তির প্রকারভেদে) দেশনার দ্ধারা পরিশুদ্ধ করা না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার অবশ্যই করা উচিত৷
পরিশুদ্ধ না হওয়া অবধি সেই আপত্তি(অপরাধসমূহ) ছাই চাপা অগ্নির ন্যায় টিমটিম করে জ্বলতে থাকে ছাইয়ের মধ্যে৷
তাই উপাধ্যায়গণদের উচিত তাদের শিষ্যদের গৃহী অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে ভিক্ষুত্বাবস্থায় বিনয় শিক্ষাপদানুসারে লঙ্ঘন করা আপত্তিসমূহকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করানো৷
নয়তো ইহজন্মে তিনি কদাপি মার্গলাভে সক্ষম হবেন না৷ মার্গের পথরোধক হবে সেই অপরাধগুলি৷ এবং দেহান্তরের পশ্চাতে অপায়ের কারণও হতে পারে৷
বজীরা বুদ্ধি টীকা ৪৪৪ পৃঃ৷
"কোন ভিক্ষু যদি সর্বনিন্ম দুব্ভাসিক আপত্তিও হয়৷ তাহলে ঐ প্রাপ্ত আপত্তিকে দেশনা করা ছাড়া পরিশুদ্ধ হওয়ার অন্য কোন মার্গ অবশিষ্ট নেই৷"
(উপসম্পন্নো ভিক্খু অন্তমসো দুব্ভাসিতম্পি আপজ্জত্বা অপরভাগে বিব্ভমিত্বা অাগতো উপম্পজ্জতি, তং অাপত্তিং দেসেত্বাব সুজ্ঝতি, ন অঞ্ঞতা৷)
গুরুকাপত্তি— বড় আপত্তি৷ যেমন সংঘাদিসেস৷
এই আপত্তি সর্বমোট ১৩টি৷ তার মধ্যে
— শুক্র মোচন(Masterbation) আপত্তিই বেশি হয়ে থাকে৷ শুধুমাত্র হাতে করলেই যে শুক্রমোচন হয় তা নয়৷ যদি সেই চেতনায় দুই পায়ের মাঝে চেপে রাখে এবং সামান্য পরিমানও যদি শুক্র নির্গত হয় তাহলেও এই আপত্তি হয়ে যায়৷
— গৃহী অবস্থায় থাকাকালীন প্রেমিকার সাথে যদি রাত্রি বা দিবাকালীন একা(অন্য কোন ভিক্ষুর অনুপস্থিতে) পাঁচ-ছয় শব্দের অধিক কথা বলে তাহলেও আপত্তি৷ তাই ভিক্ষু হলে অন্তত যে কয়দিন অবস্থান করবেন ততদিন নারীদের সাথে কথোপকথন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন৷ যথাসম্ভব আপত্তি হওয়ার কারণগুলি হতে বিরত থাকুন৷ না জানলে আচার্য বা উপাধ্যায়ের নিকট হতে জেনে নিন৷
প্রবজ্জিত হয়েছেন পূণ্যের জন্যে৷ কিন্তু পূণ্য না নিয়ে, নিয়ে যাবেন বস্তাভর্তি পাপ৷ অার শাসনকে করে যাবেন দূষিত৷ প্রত্যেক উপাধ্যায়ের উচিত নতুন উপাসম্পাদা হওয়া নব ভিক্ষুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিনয়ের শিক্ষাপদগুলি বুঝিয়ে বলা৷
অনেক ভিক্ষু মনে করেন নতুন উপসম্পাদা প্রাপ্ত নব ভিক্ষুকে বিনয় সম্পর্কে বলা অনুচিত৷ হয়তো শাসনের প্রতি অনীহা কিংবা ভয়ের সঞ্চার হবে৷ তাই তারা বলেন না৷ কিন্তু বিনয় না জানার কারণে কেবল ঐ নব ভিক্ষুরই যে আপত্তি হয় তা নয়, শাসনেরও যে অনেক ক্ষতি করছে তা অনুধাবন করতে পারেন না অনেকে৷ শাসনে থাকা না থাকা ব্যক্তিসত্বার আপন আপন মনের ব্যাপার৷ তাই বলে বিনয় বলা যাবে না এটা কেমন যুক্তি? আর যে উপসম্পাদা নিচ্ছে তারও মঙ্গল হবে যদি সে বিনয় জানে এবং যথাসাধ্য বিনয় পালনের চেষ্টা করবে৷
যদি শ্রমণ হয়, তাহলে শ্রামণ্য ধর্মসমূহ শিক্ষা দেয়া উচিত৷ এসেছে পূণ্যের আশায়, মৃত ব্যক্তিকে নিজের পূণ্যাংশ দিবে বলে, থাকছে মাত্র সপ্তাহ৷ তার মধ্যে যদি নিজের করণীয় ধর্মগুলিই না জানে তাহলে তার আর কি লাভ হলো! অবশেষে বস্তাভর্তি পাপ নিয়ে ঘরে ফিরছে সবাই৷
কিন্তু কতিপয় ভিক্ষুতো নিজেই পালন করে না, শিষ্যদের কি বা শিক্ষা দিবে৷ আফসোস.......৷ তবে নিজে পালন করা বা না করা ব্যক্তিসত্বার মনের ব্যাপার৷ কিন্তু শিষ্যকে অবশ্যই সঠিক শিক্ষা দেয়া উচিত৷
উপাধ্যায় ততক্ষণ পর্যন্ত শিষ্যের কাছে পূজনীয় যতক্ষণ পর্যন্ত শিষ্যের মঙ্গলার্থে সঠিক শিক্ষা প্রদান করেন৷ কিন্তু শিষ্য জেনে যাবে, জেনে গেলে তার সম্মানহানী হবে এই ভয়ে না বলা উপাধ্যায়ই আপন শিষ্যের কাছে পূজা অর্চনার অযোগ্য হয়ে যান৷
সুতরা নিজে যেমনই হোক, শিষ্যকে অবশ্যই সঠিক শিক্ষা দেয়া উচিত৷ আর এটাই একজন কল্যানকামী উপাধ্যায়ের গুণ৷ শীলবান হতে না পারেন সমস্যা নেই, কিন্তু অবশ্যই কল্যানকামী উপাধ্যায় হতে পারেন, যদি চেষ্টা করেন৷
অবশ্যই প্রবজ্জাপ্রার্থীগণয় পড়বেন)
Comments
Post a Comment